ছড়া

সপ্তম শ্রেণি (দাখিল) - বাংলা - সাহিত্য পড়ি লিখতে শিখি | NCTB BOOK

অন্নদাশঙ্কর রায় ১৯০৫ সালে জন্মগ্রহণ করেন এবং ২০০২ সালে মৃত্যুবরণ করেন। তিনি প্রচুর পরিমাণে গল্প, উপন্যাস, প্রবন্ধ, স্মৃতিকথা ও ছড়া-কবিতা লিখেছেন। তাঁর বিখ্যাত বইয়ের মধ্যে আছে ‘পথে প্রবাসে’, ‘বাংলাদেশে’, ‘উড়কি ধানের মুড়কি' ইত্যাদি। নিচে অন্নদাশঙ্কর রায়ের একটি ছড়া দেওয়া হলো। এটি তাঁর ‘রাঙা মাথায় চিরুনি’ ছড়ার বই থেকে নেওয়া হয়েছে।

ছড়াটি নীরবে পড়ো; পড়ার সময়ে অর্থ বোঝার চেষ্টা করো। এরপর শিক্ষকের নির্দেশ অনুযায়ী সরবে পড়ো।

ঢাকাই ছড়া

অন্নদাশঙ্কর রায়

বলছি শোনো কী ব্যাপার 

ডাকল আমায় পদ্মাপার 

আধ ঘণ্টা আকাশ পাড়ি 

তারই জন্যে কী ঝকমারি।

 

অবশেষে পেলেম ছাড়া

বিমানেতে ওঠার তাড়া।

পেয়ে গেলেম যেমন চাই 

বাতায়নের ধারেই ঠাঁই।

 

এই কি সেই পদ্মা নদী 

সিন্ধুসম যার অবধি? 

আঁকাবাঁকা জলের রেখা 

পালতোলা নাও যায় যে দেখা।

 

একটু বাদে এ কোন শহর 

ঢাকা নাকি? বেশ তো বহর! 

বিমান যখন থামল এসে 

পৌঁছে গেলাম ভিন্ন দেশে।

 

মোদের গরব মোদের আশা 

শ্রবণ জুড়ায় বাংলা ভাষা। 

বন্ধুজনের দর্শনে 

নয়ন জুড়ায় হর্ষণে।

 

বাংলা লিপি দিকে দিকে 

জয়ের চিহ্ন গেছে লিখে। 

কোথায় গেল পাকিস্তান 

খান সেনা আর টিক্কা খান।

 

রাজার বাগ আর রায়ের বাজার 

বধ্যভূমি ইটের পাঁজার। 

মেলে দেখি মানসনে 

কারবালা কি কুরুক্ষেত্র।

 

একেই ঘিরে হবে লিখা 

মহান কত আখ্যায়িকা । 

নতুন লেখক সম্প্রদায় 

নেবেন এসে লেখার দায়।

 

শব্দের অর্থ

অবধি: বিস্তার।বহর: আয়তন ।
আখ্যায়িকা: কাহিনি।বাতায়ন: জানালা ।
ইটের পাঁজা: ইটের স্তূপ।মানসনেত্র: মনের চোখ।
কারবালা: ইরাকের একটি জায়গার নাম, যেখানে এজিদ বাহিনীর সঙ্গে যুদ্ধে ইমাম হোসেন (রা) শহিদ হন।রাজার বাগ: ঢাকা শহরের একটি জায়গা, যেখানে পুলিশের ব্যারাক আছে। পঁচিশে মার্চ রাতে এখানে হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে পুলিশের প্রতিরোধ-যুদ্ধ হয়।
কুরুক্ষেত্র: মহাভারতে উল্লেখিত একটি জায়গার নাম, যেখানে কুরু ও পাণ্ডবদের মধ্যে যুদ্ধ হয়েছিল।রায়ের বাজার: ঢাকা শহরের একটি জায়গা, মুক্তিযুদ্ধের শেষ দিকে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ও তাদের দোসররা যেখানে বাঙালি বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করে ফেলে রাখে।
খান সেনা: পাকিস্তানি সৈন্য।শ্রবণ: কান।
ঝকমারি: ঝামেলা সম্প্রদায়: গোষ্ঠী।
টিক্কা খান: মুক্তিযুদ্ধের সময়ে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ইস্টার্ন কমান্ডের অধিনায়ক।হর্ষণ: আনন্দ
দর্শন: দেখা।বধ্যভূমি: যেখানে মানুষকে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়।

 

ছড়া বুঝি

শিক্ষকের নির্দেশ অনুযায়ী তোমরা দলে ভাগ হও। ‘ঢাকাই ছড়া” নামের ছড়ায় কী বলা হয়েছে, তা দলে আলোচনা করে বোঝার চেষ্টা করো। কোন দল কেমন বুঝতে পেরেছে, তা যাচাই করার জন্য এক দল অপর দলকে প্রশ্ন করবে। এজন্য আগেই দলে আলোচনা করে কাগজে প্রশ্নগুলো লিখে রাখো।

বুঝে লিখি

‘ঢাকাই ছড়া’ নামের ছড়াটি পড়ে কী বুঝতে পারলে তা নিচে লেখো।

………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………..

………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………..

………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………..

………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………..

………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………..

………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………..

………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………..

………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………..

………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………..

………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………..

………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………..

………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………..

………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………..

………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………..

………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………..

………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………..

 

খেয়াল করি

‘ঢাকাই ছড়া’ পড়ার সময়ে নিচের বিষয়গুলো খেয়াল করি।

            ১. লাইনের শেষে মিল-শব্দ আছে কি না । 

            ২. শব্দ-রূপের পরিবর্তন হয়েছে কি না। 

            ৩. তাল দিয়ে দিয়ে পড়া যায় কি না।

 

১. মিল-শব্দগুলো নিচে লেখো:

……………………………………………………………………………………………………………………………………………..

……………………………………………………………………………………………………………………………………………..

……………………………………………………………………………………………………………………………………………..

……………………………………………………………………………………………………………………………………………..

……………………………………………………………………………………………………………………………………………..

……………………………………………………………………………………………………………………………………………..

……………………………………………………………………………………………………………………………………………..

……………………………………………………………………………………………………………………………………………..

……………………………………………………………………………………………………………………………………………..

……………………………………………………………………………………………………………………………………………..

……………………………………………………………………………………………………………………………………………..

 

২. পরিবর্তিত শব্দগুলো নিচে লেখো। একইসঙ্গে শব্দগুলোর প্রমিত রূপ পাশে দেখাও। একটি করে দেখানো হলো।

কবিতায় ব্যবহৃত শব্দশব্দের প্রমিত রূপ
আমায়আমাকে
  
  
  
  
  
  
  
  

৩. কোথায় কোথায় তাল পড়ছে দাগ দিয়ে দেখাও। প্রথম চার লাইন করে দেখানো হলো। (তাল বোঝার জন্য ছড়াটি পড়ার সময়ে হাতে তালি দিয়ে দিয়ে পড়ো। খেয়াল করো, এখানে প্রতি লাইনে দুটি করে অংশ পাওয়া যাচ্ছে।)

/বলছি শোনো /কী ব্যাপার 

/ডাকল আমায় /পদ্মাপার 

/আধা ঘণ্টা /আকাশ পাড়ি 

/তারই জন্যে /কী ঝকমারি।

 

অবশেষে পেলেম ছাড়া 

বিমানেতে ওঠার তাড়া। 

পেয়ে গেলেম যেমন চাই 

বাতায়নের ধারেই ঠাঁই।

 

এই কি সেই পদ্মা নদী 

সিন্ধুসম যার অবধি? 

আঁকাবাঁকা জলের রেখা 

পালতোলা নাও যায় যে দেখা।

 

একটু বাদে এ কোন্ শহর 

ঢাকা নাকি? বেশ তো বহর! 

বিমান যখন থামল এসে 

পৌঁছে গেলাম ভিন্ন দেশে।

 

মোদের গরব মোদের আশা 

শ্রবণ জুড়ায় বাংলা ভাষা। 

বন্ধুজনের দর্শনে 

নয়ন জুড়ায় হর্ষণে।

 

বাংলা লিপি দিকে দিকে 

জয়ের চিহ্ন গেছে লিখে। 

কোথায় গেল পাকিস্তান 

খান্ সেনা আর টিক্কা খান্ ।

রাজার বাগ আর রায়ের বাজার 

বধ্যভূমি ইটের পাঁজার। 

মেলে দেখি মানসনে 

কারবালা কি কুরুক্ষেত্র।

 

একেই ঘিরে হবে লিখা 

মহান কত আখ্যায়িকা। 

নতুন লেখক সম্প্রদায় 

নেবেন এসে লেখার দায়।

 

ছড়ার বৈশিষ্ট্য খুঁজি

ছড়ার কিছু সাধারণ বৈশিষ্ট্য আছে। নিচের প্রশ্নগুলোর উত্তর খোঁজার মাধ্যমে বৈশিষ্ট্যগুলো বোঝার চেষ্টা করো।

ক্রমপ্রশ্নহ্যাঁনা
লাইনের শেষে কি মিল-শব্দ আছে?  
পড়ার সময়ে কি তাল রক্ষা করতে হয়?  
লাইনগুলোতে শব্দসংখ্যা কি সমান?  
সুর করে গাওয়া হয় কি?  
এটি কি পদ্য-ভাষায় লেখা?  
এটি কি গদ্য-ভাষায় লেখা?  
এখানে কোনো কাহিনি পাওয়া যায়?  
এখানে কোনো চরিত্র আছে কি?  
এখানে কোনো বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে কি না?  
১০এটি একাধিক অনুচ্ছেদে ভাগ করা কি না?  
১১এর মধ্যে কোনো সংলাপ আছে কি না?  
১২এটি অভিনয় করা যায় কি না?  

 

কবিতা ও ছড়ার সম্পর্ক

কবিতার সঙ্গে ছড়ার মিল রয়েছে অনেক জায়গায়। তবে, এই মিলের ভেতরেও কবিতার মধ্যে ছড়াকে আলাদা করে চেনা যায়।

১. কবিতায় মিল-শব্দ থাকে। কোনো কবিতায় লাইনের শেষে মিল-শব্দ নাও থাকতে পারে। তবে ছড়ায় অবশ্যই লাইনের শেষে মিল-শব্দ থাকে।

২. কবিতার মতো ছড়াতেও শব্দরূপের পরিবর্তন হয়। 

৩. কবিতা তাল দিয়ে দিয়ে পড়া যায়। এই তাল কখনো ধীর গতিতে পড়ে, কখনো দ্রুত গতিতে পড়ে। আবার কোনো কোনো কবিতায় তাল একেবারেই থাকে না। তবে, ছড়া অবশ্যই তাল দিয়ে পড়া যায়। আর সেই তালও পড়ে খুব ঘন ঘন।

 

ছড়া কী

ছড়া মূলত শিশুদের জন্য বানানো কবিতা। ছড়ার প্রতি জোড়া লাইনের শেষে মিল-শব্দ থাকে এবং দ্রুত তালে পড়া যায়। ছড়ার আয়তন সাধারণত ছোটো হয়। ছড়ার লাইনগুলোও আকারে ছোটো হয়ে থাকে। কবিতার মতো ছড়াও যে কোনো বিষয় নিয়ে রচিত হতে পারে। অনেক সময়ে অকারণ বা অর্থহীন বিষয় নিয়েও আবোল- তাবোল ছড়া লেখা হয়।

যাঁরা ছড়া লেখেন তাঁদের বলে ছড়াকার।

Content added || updated By

আরও দেখুন...

Promotion